ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে উত্তাল সারাদেশ। রাজধানীর শাহবাগে রাতেই অবস্থান নেন জুলাই মঞ্চের কর্মী-সমর্থকরা। বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুর থেকে হাদির মৃত্যুর খবর পৌঁছানোর পর বিক্ষোভ শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও। সারাদেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করা হয়।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেওয়া শত শত বিক্ষোভকারী হাদির হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে সেøাগান দিচ্ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে আসা শিক্ষার্থীরা তখন আধিপত্যবাদবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ ব্যানারে টিএসসির সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’; ‘হাদি ভাই মরল কেন, ইন্টেরিম জবাব দে’; ‘রুখে দাও জনগণ, ভারতীয় আগ্রাসন’ ইত্যাদি সেøাগান দেন তাঁরা।
ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়ের সেখানে বলেন, পুলিশ জানারও হাদির হত্যাকারীরা তার পাশে অবস্থান করছে। রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সব জানত। তারা জানত সবই। তাদের জানার মধ্যেই আজকে আমাদের হাদির শহীদ হতে হলো। আর যদি রাষ্ট্রের
গোয়েন্দা সংস্থা না জানে, তাহলে তাদের কেন বেতন দেওয়া হচ্ছে। সুশীলরা টকশোতে কথা বলতে বলতে আমাদেরকে হত্যাযজ্ঞ করে তুলেছে। বক্তব্য শেষে সবাইকে শপথ করান এবি জুবায়ের। শপথবাক্যে তিনি বলেন, আমরা সবাই হাদি হব, যুগে যুগে লড়ে যাব।
ছাত্র-জনতার সেই বিক্ষোভে যোগ দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদ্য সাবেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে শাহবাগে অবস্থানরত জনতার সঙ্গে যোগ দেন তাঁরা। এ সময় নাহিদ ইসলাম জনতার সঙ্গে মিলে সেøাগান দেন, ‘গোলামি না আজাদিÑ আজাদি আজাদি’। নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা জানিÑ আমরা যুদ্ধের মধ্যে আছি। শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যা করার মাধ্যমে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। তিনি বলেন, আমরা শরিফ ওসমান ভাইয়ের রক্তের দাম, এই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিক্রি হতে দেব না ইনশা আল্লাহ।
হাদির হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে সিলেটে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার পর নগরীর চৌহাট্টাস্থ বিজয় চত্বরে জড়ো হয়ে তাঁরা মিছিল ও বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে একাধিক মিছিল এসে সেখানে যুক্ত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ১২টার দিকে একটি বড় মিছিল নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় চৌহাট্টাস্থ বিজয় চত্বরে ফিরে আসে। পরে বিক্ষোভকারীরা সড়কে বসে পড়েন এবং বিভিন্ন সেøাগান দেন।
হাদির মৃত্যুর খবরে তাঁর গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি পৌর শহরের খাসমহল এলাকায় নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। একই সঙ্গে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে ঝালকাঠি শহরের কলেজ মোড় এলাকায় ঢাকা-ঝালকাঠি মহাসড়ক অবরোধ করে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছেন জুলাই যোদ্ধা, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। হাদি হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে ঝালকাঠি শহরের কলেজ মোড় এলাকায় ঢাকা-ঝালকাঠি মহাসড়ক অবরোধ করে ব্লকেড কর্মসূচি শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। মহাসড়কের ওপর অবস্থান নেওয়ায় দুই দিকের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ঢাকা, বরিশাল ও খুলনাসহ বিভিন্ন রুটের বাস, ট্রাক ও পণ্যবাহী যান আটকে পড়ে। রাতের যাত্রায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও সাধারণ মানুষ।
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে ভাঙচুর আগুন
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ক্যশৈন্যু মারমা বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে হামলা শুরু হয় পত্রিকা অফিসটিতে। কয়েকশ লোক একত্রিত হয়ে হামলা চালিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া লাইভ ভিডিওতে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা, ভাঙচুর করতে দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর সংবাদ আসার পর একদল লোক পত্রিকাগুলোর অফিসের সামনে গিয়ে জড়ো হয় এবং হামলা চালায়। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া লাইভ ভিডিওতে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা, ভাঙচুর করতে দেখা যায়। প্রথম আলোর সামনের সড়কেও আগুন জ্বালাতে দেখা গেছে। প্রথম আলোর প্রধান কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের পর ফার্মগেটে অবস্থিত ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের প্রধান কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে একদল জনতা। ভাঙচুরের পাশাপাশি ডেইলি স্টার কার্যালয়ের নিচতলায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। পত্রিকার ভবনের ছাদে বেশ কয়েকজন কর্মী আটকা পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতে একদল জনতা শাহবাগের দিক থেকে মিছিল নিয়ে প্রথম আলো কার্যালয়ে সামনে উপস্থিত হন। এ সময় তারা প্রথম আলো ও ভারতবিরোধী নানা স্লোগান দেন। এক পর্যায়ে কিছু লোকজন অফিসের ভেতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর করেন। এ ছাড়া কার্যালয়ের সামনে অগ্নিসংযোগও করেন। পরে তারা ডেইলি স্টার ভবনে হামলা চালায়।
ডেইলি স্টারের একাধিক কর্মী জানায়, আগুন দেওয়ার পর তীব্রতা তারা ছাড়ে ওঠেন। কিন্তু আগুনের ধোঁয়ার কারণে তার দম নিতে পারছিলেন না।
মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে আগুন
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর চশমা হিলের বাড়িতে। গণ-আন্দোলনে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর জ্যেষ্ঠপুত্র মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

রিপোর্টারের নাম 




















