রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নগর ভবন ৪০ দিন বন্ধ থাকার পরও কোটি টাকার তেল খরচ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে ৪০ দিন ধরে আন্দোলন হয়। এ সময় নগর ভবনের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কর্মকর্তাদের অনেকে তখন এক দিনও অফিসে আসেননি। অথচ প্রতিদিন ১৪-১৫ লিটার তেল খরচ দেখিয়েছেন তারা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির হিসাব অনুযায়ী, সংস্থাটিকে প্রতি মাসে জ্বালানি খাতে খরচ হয় প্রায় ৫ কোটি টাকা।

এপ্রিল, মে ও জুন মাসের খরচ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মে ও জুন মাসে নগর ভবন ৪০ দিন বন্ধ থাকলেও খরচ হয়েছে স্বাভাবিক সময়ের সমান তেল। অথচ এই সময়ে কার্যত কোনো অফিস কার্যক্রম ছিল না।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ধরনের কার্যকলাপ শুধু অনিয়ম নয়, এটি সরাসরি দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়। একজন নাগরিকের করের টাকায় পরিচালিত এই সংস্থায় এত বড় অনিয়মের ঘটনা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাবের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ।

জানা গেছে, গত ২৭ মার্চ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে ঘোষণা করেন। আদালতের রায়ের পর নির্বাচন কমিশন ২৭ এপ্রিল একটি গেজেট প্রকাশ করে ইশরাককে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে।

এর পর ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিএনপির নেতাকর্মী ও সিটি করপোরেশনের কিছু কর্মচারীর আন্দোলনের কারণে চলতি বছরের ১৪ মে থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত ৪০ দিন নগর ভবনের সেবা কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

এই সময়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকেরের ব্যবহৃত গাড়িটি একটি স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল (এসইউভি), যেটি প্রতিদিন ১৫ লিটার জ্বালানি খরচ করেছে বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

হিসাব করে দেখা গেছে, নগর ভবন বন্ধ থাকা অবস্থায় তিনি ৪০ দিনে ৬০০ লিটার জ্বালানি ব্যবহার করেছেন, যার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৬১ হাজার ২০০ টাকা।
করপোরেশনের পরিবহন বিভাগ জানিয়েছে, গাড়িটি প্রতি লিটার জ্বালানিতে গড়ে ৮ কিলোমিটার চলে। সে হিসাবে ১৫ লিটার তেল দিয়ে ১২০ কিলোমিটার প্রতিদিন চলেছে বলেই হিসাব দেখানো হয়েছে। প্রশ্ন হলো নগর ভবন বন্ধ থাকলে এই দৈনিক ১৯০ কিলোমিটার যাত্রা কোথায় হয়েছে।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের তিনজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খায়রুল বাকের আন্দোলনের পুরো সময় নগর ভবনে আসেননি।

এমনকি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে নগর ভবনে আসছেন অনিয়মিত। তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
একই চিত্র দেখা যায়, প্রধান সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মাদ মোবাশ্বের হাসানের ক্ষেত্রেও। তিনি একই সময় প্রতিদিন ১৪ লিটার করে মোট ৫৬০ লিটার তেল নিয়েছেন। এতে করপোরেশনের খরচ হয়েছে ৫৭ হাজার ১২০ টাকা। তিনি দাবি করেন, নগর তবন বন্ধ থাকলেও তিনি ঢাকা ওয়াসা ভবন, সচিবালয় ও কর্মচারী হাসপাতালে অফিস করেছেন। তাই তেল নিয়েছেন।

কিন্তু করপোরেশনের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, আন্দোলনের সময় করপোরেশনের বাইরে নিয়মিত অফিস চালানোর মতো কোনো অবকাঠামোই ছিল না। কিছু জরুরি সভা সচিবালয় ও ওয়াসা ভবনে হয়েছে মাত্র।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির যান্ত্রিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সংস্থাটিতে কর্মকর্তারা ৯১টি গাড়ি ব্যবহার করছেন। মোটরসাইকেল ব্যবহার করছেন ১০১টি। এ ছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত যানবাহনসহ বাকি কাজে ব্যবহৃত মোট গাড়ি ৪১৮টি। সংস্থাটিতে বর্তমানে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বর্জ্য-উচ্ছেদ অভিযানে ব্যবহারের গাড়ি মোট ৬১০টি। তথ্য বলছে, প্রতি মাসে জ্বালানি বাবদ সংস্থাটির খরচ হয় প্রায় ৫ কোটি টাকা। এসব যানবাহনের পেছনে শুধু জ্বালানি বাবদই বছরে ৬০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের তিনজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই জ্বালানির ব্যবহার অনেকটাই ‘কাগজে-কলমে’ হয়। অফিসের কাজের বাইরে ব্যক্তিগত কাজেও সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন বেশিরভাগ কর্মকর্তা। তাই চালককে খুশি রাখতে অতিরিক্ত জ্বালানি নিয়ে থাকেন। পরে চালক ওই জ্বালানি বিক্রি করেন। অতিরিক্ত জ্বালানির টাকা চালক ও জ্বালানি ইস্যুকারী কর্মকর্তার পকেটে যায়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, যিনি তেল ইস্যু করেন, তার বিরুদ্ধেও অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কর্মকর্তারা যখন অতিরিক্ত তেলের চাহিদা দেন, তা যাচাই-বাছাই না করে ইস্যুকারী কর্মকর্তা সেই বরাদ্দ অনুমোদন করেন। এরপর বাস্তবে ওই তেলের পুরোটা ব্যবহৃত না হয়ে কিছু অংশ বিক্রি করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় চালকেরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হন, তেমনি অভিযোগ রয়েছে-জ্বালানি ইস্যুকারী কর্মকর্তাও সেই টাকার অংশবিশেষ ভাগ পান।

জুন মাসের জ্বালানির হিসাবে দেখা গেছে, প্রশাসকের গাড়িতে ৮৫৫ লিটার তেল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ সিটির বর্তমান প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া একই সঙ্গে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও স্থানীয় সচিবের বিভাগের উন্নয়ন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনটি পৃথক জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার কারণে তিনটি গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ পান তিনি।

সিটি করপোরেশন প্রশাসকের জন্য বরাদ্দ করা গাড়িতে প্রতি মাসে সাড়ে ৮০০ লিটারের বেশি তেল বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে-বিষয়টি জানানো হলে শাহজাহান মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি সার্বক্ষণিক সিটি করপোরেশনের গাড়ি ব্যবহার করেন না। পরে ওই গাড়ির চালক শাহ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি অফিসের কাজে গাড়ি চালাতে গিয়েই এত তেল খরচ করেছেন। গাড়ির তেল বিক্রি করে পরিবহন শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভাগাভাগির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন।

কাগজে-কলমে করপোরেশনের কর্মকর্তাদের গাড়ির তেল ইস্যুকারী কর্মকর্তা সংস্থাটি কেন্দ্রীয় পরিবহন পুলের পরিবহন ব্যবস্থাপক মো. আরিফ চৌধুরী। এভাবে তেল ইস্যু করার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আন্দোলনের কারণে তিনি ব্যস্ত ছিলেন। তাই, আরেকজন তত্ত্বাবধায়ক তেল ইস্যু করেছেন। তবে চূড়ান্ত বিলে তিনি সই করেছেন। সব কর্মকর্তার তেল ঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে কি না, এটা তার একার পক্ষে যাচাই করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পরে তত্ত্বাবধায়ক (বাস টার্মিনাল) মামুন উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, করপোরেশন বন্ধ থাকলেও করপোরেশনের সিংহভাগ কর্মকর্তা অফিস করেছেন। তাই তেল ইস্যু করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, কেউ যদি অফিস না করেও তেল ইস্যু করে থাকেন, তাহলে সেটা নিতান্তই অন্যায়। এ ধরনের বিষয় থাকলে তিনি খতিয়ে দেখবেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

নগর ভবন ৪০ দিন বন্ধ থাকার পরও কোটি টাকার তেল খরচ

প্রকাশিত সময় : ০৪:০২:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে ৪০ দিন ধরে আন্দোলন হয়। এ সময় নগর ভবনের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কর্মকর্তাদের অনেকে তখন এক দিনও অফিসে আসেননি। অথচ প্রতিদিন ১৪-১৫ লিটার তেল খরচ দেখিয়েছেন তারা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির হিসাব অনুযায়ী, সংস্থাটিকে প্রতি মাসে জ্বালানি খাতে খরচ হয় প্রায় ৫ কোটি টাকা।

এপ্রিল, মে ও জুন মাসের খরচ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মে ও জুন মাসে নগর ভবন ৪০ দিন বন্ধ থাকলেও খরচ হয়েছে স্বাভাবিক সময়ের সমান তেল। অথচ এই সময়ে কার্যত কোনো অফিস কার্যক্রম ছিল না।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ধরনের কার্যকলাপ শুধু অনিয়ম নয়, এটি সরাসরি দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়। একজন নাগরিকের করের টাকায় পরিচালিত এই সংস্থায় এত বড় অনিয়মের ঘটনা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাবের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ।

জানা গেছে, গত ২৭ মার্চ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে ঘোষণা করেন। আদালতের রায়ের পর নির্বাচন কমিশন ২৭ এপ্রিল একটি গেজেট প্রকাশ করে ইশরাককে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে।

এর পর ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিএনপির নেতাকর্মী ও সিটি করপোরেশনের কিছু কর্মচারীর আন্দোলনের কারণে চলতি বছরের ১৪ মে থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত ৪০ দিন নগর ভবনের সেবা কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

এই সময়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকেরের ব্যবহৃত গাড়িটি একটি স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল (এসইউভি), যেটি প্রতিদিন ১৫ লিটার জ্বালানি খরচ করেছে বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

হিসাব করে দেখা গেছে, নগর ভবন বন্ধ থাকা অবস্থায় তিনি ৪০ দিনে ৬০০ লিটার জ্বালানি ব্যবহার করেছেন, যার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৬১ হাজার ২০০ টাকা।
করপোরেশনের পরিবহন বিভাগ জানিয়েছে, গাড়িটি প্রতি লিটার জ্বালানিতে গড়ে ৮ কিলোমিটার চলে। সে হিসাবে ১৫ লিটার তেল দিয়ে ১২০ কিলোমিটার প্রতিদিন চলেছে বলেই হিসাব দেখানো হয়েছে। প্রশ্ন হলো নগর ভবন বন্ধ থাকলে এই দৈনিক ১৯০ কিলোমিটার যাত্রা কোথায় হয়েছে।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের তিনজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খায়রুল বাকের আন্দোলনের পুরো সময় নগর ভবনে আসেননি।

এমনকি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে নগর ভবনে আসছেন অনিয়মিত। তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
একই চিত্র দেখা যায়, প্রধান সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মাদ মোবাশ্বের হাসানের ক্ষেত্রেও। তিনি একই সময় প্রতিদিন ১৪ লিটার করে মোট ৫৬০ লিটার তেল নিয়েছেন। এতে করপোরেশনের খরচ হয়েছে ৫৭ হাজার ১২০ টাকা। তিনি দাবি করেন, নগর তবন বন্ধ থাকলেও তিনি ঢাকা ওয়াসা ভবন, সচিবালয় ও কর্মচারী হাসপাতালে অফিস করেছেন। তাই তেল নিয়েছেন।

কিন্তু করপোরেশনের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, আন্দোলনের সময় করপোরেশনের বাইরে নিয়মিত অফিস চালানোর মতো কোনো অবকাঠামোই ছিল না। কিছু জরুরি সভা সচিবালয় ও ওয়াসা ভবনে হয়েছে মাত্র।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির যান্ত্রিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সংস্থাটিতে কর্মকর্তারা ৯১টি গাড়ি ব্যবহার করছেন। মোটরসাইকেল ব্যবহার করছেন ১০১টি। এ ছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত যানবাহনসহ বাকি কাজে ব্যবহৃত মোট গাড়ি ৪১৮টি। সংস্থাটিতে বর্তমানে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বর্জ্য-উচ্ছেদ অভিযানে ব্যবহারের গাড়ি মোট ৬১০টি। তথ্য বলছে, প্রতি মাসে জ্বালানি বাবদ সংস্থাটির খরচ হয় প্রায় ৫ কোটি টাকা। এসব যানবাহনের পেছনে শুধু জ্বালানি বাবদই বছরে ৬০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের তিনজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই জ্বালানির ব্যবহার অনেকটাই ‘কাগজে-কলমে’ হয়। অফিসের কাজের বাইরে ব্যক্তিগত কাজেও সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন বেশিরভাগ কর্মকর্তা। তাই চালককে খুশি রাখতে অতিরিক্ত জ্বালানি নিয়ে থাকেন। পরে চালক ওই জ্বালানি বিক্রি করেন। অতিরিক্ত জ্বালানির টাকা চালক ও জ্বালানি ইস্যুকারী কর্মকর্তার পকেটে যায়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, যিনি তেল ইস্যু করেন, তার বিরুদ্ধেও অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কর্মকর্তারা যখন অতিরিক্ত তেলের চাহিদা দেন, তা যাচাই-বাছাই না করে ইস্যুকারী কর্মকর্তা সেই বরাদ্দ অনুমোদন করেন। এরপর বাস্তবে ওই তেলের পুরোটা ব্যবহৃত না হয়ে কিছু অংশ বিক্রি করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় চালকেরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হন, তেমনি অভিযোগ রয়েছে-জ্বালানি ইস্যুকারী কর্মকর্তাও সেই টাকার অংশবিশেষ ভাগ পান।

জুন মাসের জ্বালানির হিসাবে দেখা গেছে, প্রশাসকের গাড়িতে ৮৫৫ লিটার তেল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ সিটির বর্তমান প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া একই সঙ্গে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও স্থানীয় সচিবের বিভাগের উন্নয়ন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনটি পৃথক জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার কারণে তিনটি গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ পান তিনি।

সিটি করপোরেশন প্রশাসকের জন্য বরাদ্দ করা গাড়িতে প্রতি মাসে সাড়ে ৮০০ লিটারের বেশি তেল বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে-বিষয়টি জানানো হলে শাহজাহান মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি সার্বক্ষণিক সিটি করপোরেশনের গাড়ি ব্যবহার করেন না। পরে ওই গাড়ির চালক শাহ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি অফিসের কাজে গাড়ি চালাতে গিয়েই এত তেল খরচ করেছেন। গাড়ির তেল বিক্রি করে পরিবহন শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভাগাভাগির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন।

কাগজে-কলমে করপোরেশনের কর্মকর্তাদের গাড়ির তেল ইস্যুকারী কর্মকর্তা সংস্থাটি কেন্দ্রীয় পরিবহন পুলের পরিবহন ব্যবস্থাপক মো. আরিফ চৌধুরী। এভাবে তেল ইস্যু করার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আন্দোলনের কারণে তিনি ব্যস্ত ছিলেন। তাই, আরেকজন তত্ত্বাবধায়ক তেল ইস্যু করেছেন। তবে চূড়ান্ত বিলে তিনি সই করেছেন। সব কর্মকর্তার তেল ঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে কি না, এটা তার একার পক্ষে যাচাই করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পরে তত্ত্বাবধায়ক (বাস টার্মিনাল) মামুন উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, করপোরেশন বন্ধ থাকলেও করপোরেশনের সিংহভাগ কর্মকর্তা অফিস করেছেন। তাই তেল ইস্যু করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, কেউ যদি অফিস না করেও তেল ইস্যু করে থাকেন, তাহলে সেটা নিতান্তই অন্যায়। এ ধরনের বিষয় থাকলে তিনি খতিয়ে দেখবেন।