আট বছরের প্রেম। এরপর বিয়ে। পরিবার রাজি না থাকলেও বেশ ভালোই কাটছিল দাম্পত্য জীবন। কিন্তু এক বছর না যেতেই হঠাৎ নেমে আসে অশান্তি। স্বামীর অজান্তেই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন স্ত্রী। সেই সম্পর্ক থেকে ফেরাতে নানাভাবে চেষ্টাও করেছেন স্বামী। কিন্তু পারলেন না। শেষ পর্যন্ত নিজেকেই শেষ করে দিলেন। তবে মৃত্যুর আগে স্ত্রীর উদ্দেশ্যে কিছু কথা লিখে গেলেন নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে।
যেখানে লেখা ছিল- ‘আর পাঁচটা মানুষের মতো আমার জীবন না। মনে রাখিস, তোর বেঈমানি ও পরকীয়ার জন্য আত্মহত্যা করলাম আমি…’। এমনই স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এমরান হোসেন মুন্না।
২৯ বছর বয়সী মুন্না কুমিল্লা সদরের বারপাড়ার মতিউর রহমানের ছেলে। তার স্ত্রীর নাম সৈয়দা সাজিয়া শারমিন ঊষা। তিনি জেলার লাকসামের রাজাপুর এলাকার খিলা বাজার গ্রামের সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে।
জানা গেছে, আট বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর পরিবারের অমতেই বিয়ে করেন মুন্না ও ঊষা। কিন্তু এক বছর পার না হতেই তাদের দাম্পত্য জীবনে নেমে আসে অশান্তি। স্ত্রী ঊষা ঢাকায় পড়াশোনা করেন। সেখানে আরেকটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। নানাভাবে চেষ্টা করেও স্ত্রীকে পরকীয়া সম্পর্ক থেকে ফেরাতে না পেরে অভিমানে আত্মহত্যা করেন মুন্না।
২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় কুমিল্লা নগরীর বারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার রাতে উষার বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন নিহতের বাবা মো. মতিউর রহমান।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, এক সময় কুমিল্লা কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউটের (বর্তমানে সরকারি সিটি কলেজ) শিক্ষার্থী ছিলেন মুন্না ও ঊষা। দুজন এক বছরের সিনিয়র-জুনিয়র। কলেজ জীবনে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা। প্রেমের সম্পর্ক থেকে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের বছরখানেক পর থেকেই তাদের পারিবারিক জীবনে টানাপোড়েন শুরু হয়। ঊষা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুবাদে বেশিরভাগ সময় ঢাকায় থাকতেন। আর মুন্না প্রথমে কুমিল্লায় একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করলেও পরে চাকরি ছেড়ে কুমিল্লায়ই ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন। দিনদিন তাদের মধ্যে সম্পর্কে ফাটল ধরে।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, ঊষা ঢাকায় সোহেল নামে এক ছেলের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে মুন্নাকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করতেন। চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারার অজুহাতে মরে যাওয়ার কথা বলে কটাক্ষ করতেন। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন মুন্না। বুধবার তিনি আত্মহত্যার প্রস্তুতি নিয়ে স্ত্রীকে ছবি পাঠান ও মেসেজ করেন। কিন্তু স্ত্রী কর্ণপাত করেননি। কাউকে জানাননি। বরং উল্টো উসকানিমূলক কথাবার্তা বলেন। এতে মুন্না ক্ষোভে নিজের শোবার ঘরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।
পরিবারের লোকজন আওয়াজ পেয়ে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথেই মারা যান। ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার বাদ জোহর গুধির পুকুরপাড় ঈদগাহে মুন্নার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এ বিষয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আনওয়ারুল আজিম বলেন, আত্মহত্যার প্ররোচনায় মামলা করেছে নিহতের পরিবার। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। এটা প্রমাণ সাপেক্ষ বিষয়। তাই কেন তিনি আত্মহত্যা করেছেন, তা প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত বলা যাবে না।-ডেইলি বাংলাদেশ