পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ‘বিএনপি নেতাদের আপত্তিকর’ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। বুধবার (৩ মার্চ) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. আসাদুজ্জামানের সই করা বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়। তবে বিবৃতিতে কোনো দল বা দলের নেতার নাম উল্লেখ করা হয়নি। বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের সূচনা করেন বাঙালি পুলিশ সদস্যরা। সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেন এবং ১৪ হাজার পুলিশ সদস্য মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের উত্তরাধিকারী বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা সেবার সুমহান ব্রত নিয়ে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
জঙ্গিবাদ দমনসহ দেশের প্রতিটি সংকটে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্ভীক পুলিশ সদস্যরা দেশপ্রেমের দৃপ্ত শপথে বলীয়ান হয়ে কাজ করছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে দেশের চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছে।
অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বাংলাদেশ আজ যেকোনো বিবেচনায় নিরাপদ। ফলে বিদেশি বিনিয়োগসহ সব ধরনের বিনিয়োগে বাংলাদেশকে আদর্শ স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আলোচনায় আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ ও ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দলকে উদ্দেশ্য করে নয় বরং বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং মুক্তিযুদ্ধের সত্য ও সঠিক ইতিহাসের আলোকে বক্তব্য দিয়েছেন। বাংলাদেশ পুলিশ বিশ্বাস করে, রাজনীতিবিদরাই রাষ্ট্র পরিচালনা করেন এবং করবেন। সভ্য সমাজ ব্যবস্থায় রাজনীতিবিদদের সম্মানের সঙ্গে দেখা হয় এবং বাংলাদেশ পুলিশ বরাবরই রাজনীতিবিদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করে আসছে। অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, মহান স্বাধীনতার মাসে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধের সূচনাকারী গর্বিত পুলিশ বাহিনীর প্রধান ও ডিএমপি কমিশনারের বিরুদ্ধে একটি দলের মহাসচিব ও দায়িত্বশীল নেতারা বিভিন্ন সমাবেশ এবং গণমাধ্যমে আপত্তিকর, আক্রমণাত্মক, বিভ্রান্তিকর ও বিব্রতকর বক্তব্য দিয়েছেন, যা পরিকল্পিত, অশোভনীয় ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
অতীতের বিভিন্ন সময়ে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালনকারী একটি দলের নেতাদের মুখে পুলিশের মতো পেশাদার বাহিনী সম্পর্কে এ ধরনের হুমকি প্রদানপূর্বক বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রত্যাশিত ও অনভিপ্রেত। ভবিষ্যতে তারা এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন, এটাই বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন প্রত্যাশা করে।
বাংলাদেশ পুলিশ সর্বদা রাষ্ট্রের কল্যাণে ও জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা প্রদানসহ স্থিতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে। দেশের শান্তিপ্রিয় ও উন্নয়নকামী জনগণ পুলিশের পাশে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ তাদের এ ধরনের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে আইনসঙ্গত সকল কাজে পুলিশের প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন বজায় রাখবে বলে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।
সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্পর্কে আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার ‘অশালীন’ বক্তব্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ করে বিএনপি। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সম্প্রতি বলেন, তারা চারবারের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন, তা সভ্যতার সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
২৮ মার্চ দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমরা পুলিশের প্রধান ও ঢাকা মহানগর পুলিশ প্রধানের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানাই এবং দুই কর্মকর্তাকে অবিলম্বে চাকরি থেকে অব্যাহতির দাবি জানাচ্ছি।
একই দিন এক আলোচনা সভায় পুলিশ প্রধান ও ডিএমপি কমিশনারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করা বিস্ময়কর; সরকার পরিবর্তন হলে এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে। সরকারের বেআইনি আদেশ পালন করছে বলেই নিষেধাজ্ঞা পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।’২৫ মার্চ আরেক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন।
২৬ মার্চ রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মিলনায়তনে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বক্তব্য দেন। সেখানে বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে বেনজীর আহমেদ বলেন, তারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। দেশের অর্থনীতির ওপর অবরোধ আরোপ করতে একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা লবিস্ট নিয়োগ করছেন, জিএসপি বন্ধ করতে চিঠি লিখেছেন।’
একই অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা’ বলার কড়া সমালোচনা করে বলেন, ‘যাকে তার স্বামী পরিত্যাগ করছিল…যে পাকিস্তানের ওখানে কী করছে…। আর এখন সে নাকি এক নম্বর মুক্তিযোদ্ধা।ডেল্টা টাইমস

দৈনিক দেশ নিউজ ডটকম ডেস্ক 

























