কর্মসূচিতে না যাওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হল থেকে দুই শিক্ষার্থীর বিছানাপত্র নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী হলেন, অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জোনায়েদ আহমদ ও একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেন। জোনায়েদ আহমদ ৩৫১ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ও জোবায়েদ হোসেন প্রাধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে ওই কক্ষে থাকেন।
অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতা হলেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম আলী ও সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম। তারা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী।
আজ শনিবার (৩ জুন) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ৩৫১ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই দুই শিক্ষার্থী হল প্রাধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা বলছেন, ‘বেডটা একটু নিচে নামিয়ে দিয়েছি যাতে পরবর্তীতে সে আমার কাছে আসে।’
ভুক্তভোগী ও অন্যান্য শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুর দুইটার দিকে ৩৫১ নম্বর কক্ষে আসেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম আলী ও সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম। তারা সবাইকে কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য ডাকে। কিন্তু ৫ জুন জোবায়েদের পরীক্ষা থাকায় তিনি কর্মসূচিতে না যেতে চাইলে তাদেরকে কর্মসূচিতে যেতেই হবে বলে হুমকি দেন ছাত্রলীগ নেতারা। এর কিছুক্ষণ পর তাদের দুজন অনুসারী এসে রুমের সবাইকে কর্মসূচিতে যেতে বলেন। অন্যথায় তাদেরকে হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে বলে হুশিয়ারি দেন।
পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফের রুমে আসেন মাজহারুল ইসলাম ও তার এক অনুসারী। তারা ভুক্তভোগীদের বিছানাপত্র নামিয়ে দেন। এসময় ভুক্তভোগীরা রুমে ছিলেন না।
জোনায়েদ আহমদ বলেন, ‘তাদের সঙ্গে দেখা হলেই তারা আমাকে কর্মসূচিতে যেতে বলেন। কিন্তু আমি তো রাজনৈতিকভাবে হলে উঠি নাই। প্রাধ্যক্ষ স্যারই আমাকে হলে তুলেছেন। এর আগেও তারা আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছেন। কিন্তু আমি কাউকে কিছু বলি নাই। আজকেও তারা আমাকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য ডাকে। আমি না গেলে তারা আমার বিছানাপত্র নামিয়ে দিয়েছে।’
আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেন বলেন, ‘আমি পলিটিক্যালি হলে উঠলেও এখন নন-পলিটিক্যাল ব্লকে বিভাগের সিনিয়রের সঙ্গে বেড শেয়ার করে থাকি। তবে তারা আমাদেরকে নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য ডাকতো। আজ যখন নাঈম ও মাজহার আমাদেরকে ডাকতে আসে তখন আমি তাদেরকে আমার পরীক্ষার কথা জানাই। কিন্তু তারা কোন কথা শুনেননি। পরে দুজন জুনিয়র ছেলে এসে আমাদেরকে বলে, ‘আপনাদের সবাইকে প্রোগ্রামে যেতে হবে। নাহলে হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে।’ এরপরে এসে আমার বেড নামিয়ে দিয়েছেন। যদিও এই বেডটি আমার না।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা নাঈম আলী বলেন, ‘এই অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি ওই রুমে যাইনি। আর মাজহারুল গিয়েছিল কিনা আমি বিষয়টি অবগত না। তবে আমি তাদেরকে ডেকে বিষয়টি সমাধান করবো।’
অভিযুক্ত মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘তারা ছাত্রলীগের মাধ্যমেই হলে উঠেছে। যারা আমাদের কর্মী তাদেরকে আমরা কর্মসূচিতে ডাকি। স্বাভাবিকভাবেই তারা না আসলে আমরা একটু শাসন করি। এর মানে তাদেরকে বের করে দিচ্ছি বিষয়টি এমন নয়। বেডটা একটু নিচে নামিয়ে দিয়েছি যাতে পরবর্তীতে সে আমার কাছে আসে। তবে আমি তাদেরকে জোড়াজুড়ি করি নাই। তারা যদি আমাকে বলতো যে ভাই, প্রোগ্রাম-টোগ্রাম আর করবো না তাহলে আমি আর ডাকতাম না।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘আমি বিষয়টি মাত্র শুনলাম। খোঁজ খবর নিয়ে ছাত্রলীগের কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সার্বিক বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘অভিযুক্ত মাজহারুল আমাদের হলের শিক্ষার্থী না। আমরা আবাসিক শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে ঘটনা তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। একই সঙ্গে ভুক্তভোগীরা নিজেদের সিটেই থাকবে।