চলমান মহামারি করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় বিশ্বজুড়ে দৈনিক মৃতের সংখ্যা ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে। একই সঙ্গে আগের দিনের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমল প্রাণঘাতী ভাইরাসে নতুন সংক্রমিত রোগীর সংখ্যাও। গেল ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে কোভিড শনাক্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন আট হাজারের অধিক মানুষ। একই সময়ে রোগটিতে নতুন করে আক্রান্ত লোকজনের সংখ্যা সোয়া ২২ লাখের নিচে নেমে এসেছে।

সর্বশেষ এক দিনে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটল ইউরোপের দেশ ফ্রান্সে। এ দিকে দৈনিক প্রাণহানির তালিকায় এখনো শীর্ষস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নাম। প্রাণ হারানোদের তালিকায় এরপরই রয়েছে যথাক্রমে ব্রাজিল, রাশিয়া, ব্রিটেন, ইতালি, পোল্যান্ড এবং মেক্সিকো। এতে বিশ্বব্যাপী রোগটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯ কোটি ৩৬ লাখের ঘর ছাড়িয়েছে। অপর দিকে মৃতের সংখ্যাও এরই মধ্যে ৫৭ লাখ ৫২ হাজারে পৌঁছে গেছে।

রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে মৃত্যু, আক্রান্ত ও সুস্থতার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডো মিটারস থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শেষ ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে কোভিড সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন আট হাজার ৩১৯ জন। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার হ্রাস পেয়েছে। এতে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা ৫৭ লাখ ৫২ হাজার ৫০৫ জনে দাঁড়িয়েছে।

নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ২২ লাখ ১৭ হাজার ৩৮৪ জন। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ছয় লাখ কমেছে। এতে মহামারির তাণ্ডব শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ৩৯ কোটি ৩৬ লাখ ৬৩ হাজার ৯৯৬ জন ছাড়িয়েছে।

এ দিকে গত এক দিনে বিশ্বজুড়ে করোনার থাবায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত রোগী দেখল ফ্রান্সের জনগণ। একই সময়ে ফরাসি ভূখণ্ডে নতুন করে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখ ১৪ হাজার ৫৪২ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৭০ জন। মহামারির তাণ্ডব শুরুর পর থেকে দেশটিতে এ পর্যন্ত দুই কোটি ছয় লাখ দুই হাজার ৯৩২ জন রোগটিতে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মারা গেছেন এক লাখ ৩২ হাজার ৩৭৭ জন।

অন্য দিকে দৈনিক প্রাণ হারানোদের তালিকায় এখনো শীর্ষস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সময়ে মার্কিন ভূখণ্ডে নতুন করে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ পাঁচ হাজার ২২ জন এবং মৃত্যু হয়েছে একহাজার ৫১ জনের। করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশটিতে এ পর্যন্ত সাত কোটি ৭৬ লাখ ২৩ হাজার ৬২৪ জন রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। আর মৃত্যু হয়েছে নয় লাখ ২৫ হাজার ৬৫১ জনের।

করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় ও প্রাণ হারানোদের সংখ্যায় তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৮০০ জন। আর নতুন করে রোগটিতে সংক্রমিত হয়েছেন এক লাখ ৫৪ হাজার ২৪০ জন। অপর দিকে মহামারির তাণ্ডব শুরুর পর থেকে দেশটিতে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দুই কোটি ৬৪ লাখ ৭৩ হাজার ২৭৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ছয় লাখ ৩১ হাজার ৮৬৯ জনের।

রাশিয়ায় শেষ ২৪ ঘণ্টায় কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৭১৪ জন। আর নতুন করে রোগটিতে সংক্রমিত হয়েছেন এক লাখ ৭৭ হাজার ২৮২ জন। এছাড়া মহামারির তাণ্ডব শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে এক কোটি ২৬ লাখ ৩০ হাজার ৪৭ জনে দাঁড়িয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে তিন লাখ ৩৪ হাজার ৭৫৩ জনের।

শেষ এক দিনে ইউরোপের মুসলিম রাষ্ট্র তুরস্কে নতুন করে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ৯৮ হাজার ৭১৫ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২২১ জনের। একই সময়ে আরেক ইউরোপীয় দেশ ইতালিতে নতুন করে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন ৯৩ হাজার ১৫৭ জন এবং মারা গেছেন ৩৭৫ জন।

এছাড়া শেষ এক দিনে ব্রিটেনে নতুন করে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ৬০ হাজার ৫৭৮ জন এবং মারা গেছেন ২৫৯ জন। করোনা মহামারির তাণ্ডব শুরুর পর থেকে দেশটিতে এ পর্যন্ত এক কোটি ৭৭ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯৯ জন রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মারা গেছেন এক লাখ ৫৮ হাজার ২৪৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় কলম্বিয়ায় নতুন করে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ১২ হাজার ৫৬৭ জন। আর প্রাণ হারিয়েছেন ২৩৬ জন।

এছাড়া অঞ্চলটির আরেক দেশ জার্মানিতে নতুন করে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন এক লাখ ৬৬ হাজার ৬২০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৯৮ জনের। করোনা মহামারির তাণ্ডব শুরুর পর থেকে দেশটিতে এ পর্যন্ত এক কোটি নয় লাখ ৪৫ হাজার ৪৪৯ জন রোগটিতে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন। আর এক লাখ ১৯ হাজার ৩৩২ জন মারা গেছেন। একই সময়ে ইউক্রেনে নতুন করে কোভিড সংক্রমিত হয়েছেন ৪২ হাজার ৫৩৩ জন এবং মারা গেছেন ১৮৫ জন।

এ দিকে করোনায় সংক্রমিতদের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ দেশ ভারত। যদিও প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারানোদের সংখ্যার তালিকায় দেশটির অবস্থান এখন তৃতীয়। মহামারির তাণ্ডব শুরুর পর থেকে দেশটিতে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চার কোটি ২১ লাখ ৮৪ হাজার ৬২৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে মারা গেছেন পাঁচ লাখ দুই হাজার আটজন।

এছাড়া কোভিড সংক্রমিত হয়ে শেষ এক দিনে পোল্যান্ডে ২৭২ জন, পেরুতে ২৪৫ জন, আর্জেন্টিনায় ১৪৫ জন, ভিয়েতনামে ১১৪ জন, কানাডায় ৯৯ জন, গ্রিসে ৭২ জন এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ৫১ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। অন্য দিকে নির্ধারিত ২৪ ঘণ্টায় উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোতে মারা গেছেন ৬৮৮ জন। মহামারির তাণ্ডব শুরুর পর থেকে দেশটিতে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে তিন লাখ আট হাজার ৮২৯ জনের।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে এশিয়ার পরাশক্তি চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর গত বছরের ১১ মার্চ প্রাণঘাতী ভাইরাসটিকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এর আগে একই বছরের ২০ জানুয়ারি সংস্থাটি বিশ্বজুড়ে জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে।