1. news@dailydeshnews.com : Admin2021News :
  2. : deleted-txS0YVEn :
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৫ অপরাহ্ন

দেশে ফিরে রাঘববোয়ালদের নাম ফাঁস করতে চান পি কে

দৈনিক দেশ নিউজ ডটকম ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০২২
  • ৬৭ পঠিত

বহুল আলোচিত পি কে কাণ্ডে ফেঁসে যেতে পারেন বহু রাঘববোয়াল। ভারতের অর্থসংক্রান্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হাতে গ্রেপ্তার পি কে হালদার গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের কাছে মুখ খোলার পর অপকর্মের হোতাদের নাম প্রকাশ্যে আসার ‘ক্ষেত্র’ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে পি কের মুখে টাকা পাচারে ‘শুধু তিনি নন, মূল নায়ক অন্য’- কথাটি বের হওয়ার পর পেছনের রাঘববোয়াল কারা? এ নিয়ে দুই বাংলায়ই ব্যাপক কৌতূহল শুরু হয়েছে। আর এমন সুযোগে কলকাতায় পি কে হালদারকে কোন কোন নেতা সাহায্য করেছেন, তা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে সেটি চলছে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে। পাশাপাশি পি কে হালদার দেশে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও কবে এবং কীভাবে তিনি ফিরতে পারবেন- তা নিয়ে এখনো কেউ স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, পি কে হালদারের গ্রেপ্তার শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি সরকারকে দিতে পারে স্বস্তি। দুই দেশের রাঘববোয়ালরা ধরা পড়তে পারে। দুর্বল হতে পারে আল কায়েদার ছত্রছায়ায় চলা জেএমবিসহ একাধিক জঙ্গি সংগঠনের অর্থনৈতিক শক্তি। এক প্রশ্নের উত্তরে মাস্কে ঢাকা পি কে হালদারের মুখের হাসি আর দেশে ফিরে সব ফাঁস করার ইচ্ছা সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে না তো? অনুমান নয়; সমীকরণ কষেই জন্ম নিয়েছে বহু প্রশ্নের সম্ভাবনাময় উত্তর। মোদি-হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতি সফল করার চাবি হতে চলেছে পি কে হালদার। দুই দেশের লাখো কোটি মানুষের ভাবনা এক লহমায় পাল্টে দিতে পারে পি কে হালদারের অর্থ পাচার পর্ব। আর যারা জড়িত, তাদেরও ঘুম হারাম হতে চলেছে। নানা সূত্র থেকে আসা তথ্যগুলো একসারিতে বসালে পাচার ও নিরাপত্তা পরিকাঠামোর পরিবেশ বদলের এমন চিত্র তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) বলেছে, পি কের সহযোগীদের খুঁজে বের করতে একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ আর্থিক খাতের বড় বড় পাণ্ডারা নজরে রয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক এবং রাজ্যটির প্রভাবশালী মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের পর এ বিষয় নিয়ে মুখ খুলেছে পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। বিজেপির মুখপাত্র শমিক ভট্টাচার্য্য জানান, পি কে হালদার নামে যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনি বাংলাদেশের আর্থিক খাতের জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি কলকাতার অশোকনগরের মতো একটি জায়গায় বাড়ি করেছেন, ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। আর সেই খবর প্রশাসন জানে না, এটা হতে পারে না। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের মদত ছাড়া এভাবে ব্যবসা বাড়ানো যায় না। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বড় বিপদ। তিনি বলেন, আমরা চাই তদন্ত হোক এবং সত্য ঘটনা সামনে আসুক। তার অভিযোগ, অতীতে সিপিআইএম এদের মদত দিয়ে বিষবৃক্ষ তৈরি করেছে, আর এখন তৃণমূল কংগ্রেস এই বিষবৃক্ষকে আরো জড়িয়ে ধরেছে। শমিকের অভিমত, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি করতে হবে। বাংলাদেশ সরকারকেও বিষয়টি জানাতে হবে। কারণ এখানে বসে শেখ হাসিনা সরকারকে খুনের চক্রান্ত করা হচ্ছে, মুজিব হত্যার আসামিদের এখান থেকে ধরা হচ্ছে, বহু অপরাধী বাংলাদেশ থেকে অপরাধ করে এখানে নিরাপদ আশ্রয় নিয়ে বসে আছে। এটা চলতে পারে না।

এদিকে গত শনিবার গ্রেপ্তার হওয়া পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা বর্তমানে ইডির জেরার মুখে রয়েছেন। গতকাল সোমবার ইডি কার্যালয়ে জেরার এক ফাঁকে পি কে হালদার সাংবাদিকদের বলেন, তিনি দেশে ফিরতে চান এবং ফাঁস করতে চান রাঘববোয়ালদের নাম। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ ঠিক নয়। ইডি সূত্রের খবর, রবিবার রাতের পর সোমবার দিনভর পি কে হালদার ও তার ভাই প্রানেশকে জেরা করা হয়। জানতে চাওয়া হয়, হাওয়ালার মাধ্যমে কত টাকা কবে থেকে আনা হয় ভারতে। কোন কোন দেশে, কোথায় কোথায়, কোন কোন ক্ষেত্রে এই টাকা বিনিয়োগ করেছেন তিনি। জেরায় পি কে জানিয়েছেন, টাকা তছরুপ কাণ্ডে তাকে যেভাবে ফাঁসানো হয়েছে, তা ঠিক নয়। এ ঘটনায় শুধু তিনি নন; মূল নায়ক অন্য অনেকেই। বাংলাদেশে ফিরে সরকারকে সব সত্য তিনি জানাবেন।

ইডি সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দুই দিনের তুলনায় গতকাল সোমবার অনেকটাই খোশমেজাজে ছিলেন পি কে হালদার। দিনে তিন বেলায় তাদের বাইরে থেকে খাবার এনে দেয়া হয়েছে। তাদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেদিকটিও মাথায় রাখছেন ইডির কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব মোবাইলের লক খুলে তদন্ত করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। প্রত্যেকের কাছ থেকেই মোবাইলে রাখা তথ্য/ডেটা সংগ্রহ করছেন তারা। মোবাইল ডিভাইস থেকে মিলেছে বহু চাঞ্চল্যকর তথ্য। যার সূত্র ধরে এ দেশে বিনিয়োগ করা ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের খোঁজ শুরু করেছে ইডি। ভারতে নানা স্থানে সম্পত্তি, ব্যবসা আর ব্যাংকে টাকা রাখার ক্ষেত্রে যারা জড়িত তাদের ওপর নজরদারি শুরু করেছে ইডি। সূত্রের খবর, ছোট ছোট একাধিক টিমে ভাগ হয়ে পি কে হালদারের হাওয়ালার র‌্যাকেট ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদেরও এবার নিজেদের আয়ত্তে আনতে সক্ষম হবে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো।

সূত্রের খবর, পি কে হালদারের তদন্তে পাওয়া সমস্ত তথ্য অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থাকেও দেয়া হয়েছে, পরবর্তী তদন্তের রূপরেখা তৈরির জন্য। এ কাজে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকার জন্য পৃথক ইউনিট তৈরি করেছে। পি কের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা এবং তদন্তকারী সংস্থাগুলো মনে করছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন আর ২০২৪ সালের ভারতের লোকসভা নির্বাচনে নাশকতা করার পেছনে বা সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে এই হাওয়ালার টাকার একটা অংশ ব্যবহার করতে পারে চক্রীরা। ভারত-বাংলাদেশের গোয়েন্দার সংস্থা একাধিক বৈঠকে তাদের তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, আল কায়েদার ছাতার তলায় কাজ করার সময় জেএমবিসহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলো ছদ্মবেশে রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে মিশে নিজেদের কাজ করে থাকে। আর এ কাজে ব্যয় করা অর্থের একটা অংশ আসে হাওয়ালা ব্যবসার কাটমানি থেকে। পি কে হালদারের পাচার করা টাকার পরিমাণ যেহেতু মোটা অঙ্কের; সেহেতু এই চক্রই আন্তর্জাতিক টাকা পাচারের সঙ্গে যুক্ত। ফলে পি কে হালদারের টাকা পাচারকারী চক্রের হদিস পেলে তা হবে বিরাট সাফল্য।

এর আগে গত শুক্র ও শনিবার পশ্চিমবঙ্গের ১১টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০২ সালের ‘প্রিভেনশন অব মানিলন্ডারিং অ্যাক্ট (পিএমএলএ)’ এর অধীনে ৩ ও ৪ ধারায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া পি কে হালদার ছাড়াও অন্যরা হলেন প্রানেশ কুমার হালদার, স্বপন মিত্র ওরফে স্বপন মিস্ত্রি, উত্তম মৈত্র ওরফে উত্তম মিস্ত্রি, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার এবং আমানা সুলতানা ওরফে শারমিন হালদার। গ্রেপ্তারকৃত ৬ জনকেই শনিবার কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালতে (স্পেশাল সিবিআই-১) তোলা হলে ৫ জনকে ইডির রিমান্ডে নেয়া হয় এবং একজনকে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়। আজ মঙ্গলবার অভিযুক্ত সবাইকে ফের আদালতে তোলা হবে। এদিন সকালে প্রথমে সিজিও কমপ্লেক্স থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হবে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে। সেখানে মেডিকেল চেকআপ করিয়ে তোলা হবে আদালতে। সেক্ষেত্রে ফের নিজেদের হেফাজতে চাইতে আদালতে আবেদন জানাতে পারে ইডি। কারণ ইডি সূত্রে খবর, এখনো বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর তাদের অজানা।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে। সেই টাকা বাংলাদেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ভারতে এই বিষয়টি পিএমএল আইনে একটি গুরুতর অপরাধ বলে বিবেচিত করা হয়েছে। এই পি কে হালদার নিজের আসল নাম বদল করে শিবশংকর হালদার নামে ভারতে বসবাস করছিলেন। পি কে এবং তার সহযোগীরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে ইস্যু করা রেশন কার্ড এবং ভারত সরকারের ইস্যু করা আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড বানিয়ে ফেলেন। প্রাথমিক তদন্তে ইডি জানতে পেরেছে বাংলাদেশ এবং ভারতীয় পাসপোর্টের পাশাপাশি পি কে হালদারের ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ গ্রেনাডার পাসপোর্ট রয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিসও ছিল।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All Rights Reserved © DAILY DESH NEWS.COM 2020-2023
Theme Customized BY Sky Host BD