বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যারা ভোট বাক্স ডাকাতি করবে তারা মানুষের স্বাধীনতা হরণকারী: প্রধান উপদেষ্টা

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি সাধারণ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “সরকার গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

 

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় মহান বিজয় দিবস-২০২৫ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই কথা বলেন।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমরা চাই এই নির্বাচন হোক সত্যিকার অর্থে উৎসবমুখর, অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ এবং সর্বোপরি সুষ্ঠু। নির্বাচনকে ঘিরে নিরাপত্তা, প্রশাসনিক প্রস্তুতি, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং পর্যবেক্ষণের প্রতিটি ধাপকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও পবিত্রতা রক্ষার জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা অপরিসীম। আমি দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের প্রতি উন্মুক্ত আহ্বান জানাচ্ছি—আপনারা একে অপরকে প্রতিযোগী হিসেবে দেখবেন, কখনো শত্রু হিসেবে দেখবেন না। নির্বাচনের মাঠে এমন একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করুন, যাতে দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যারা ভোট বাক্স ডাকাতি করবে তারা দেশের মানুষের স্বাধীনতা হরণকারী। তারা নাগরিকদের দুশমন। তাদের থেকে নাগরিকদের রক্ষা করা আমাদের সবার অবশ্য কর্তব্য। ভোট জনগণের ভবিষ্যৎ রচনার অক্ষর। ভোট বাক্সে ভোট জমা দিতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যৎ আর রচনা করা যাবে না। আপনার ভোট আপনি সযত্নে ভোট বাক্সে দিয়ে আসুন। কেউ বাধা সৃষ্টি করলে তাকে সুশৃংখলভাবে প্রতিহত করুন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিন।”

দেশবাসীকে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “ভোটের ওপর নির্ভর করছে আপনার আমার সবার ভবিষ্যৎ। আপনার আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ। যোগ্য লোককে ভোট দিন। জাতির ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন। মনে রাখবেন, ভোট রক্ষা করা দেশ রক্ষা করার সমান দায়িত্ব। ভোট রক্ষা করুন। দেশকে রক্ষা করুন। ভোট দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার গাড়ির চাকা। এই চাকা কাউকে চুরি করতে দেবেন না।”

 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে প্রশাসনকে আরো কার্যকর, নিরপেক্ষ ও নির্বাচনি পরিবেশের উপযোগী করতে সরকার মাঠ প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনে বেশ কিছু রদবদল করেছে। এই পরিবর্তনগুলো কারো প্রতি অনুরাগ বা বিরাগ প্রসূত নয়। এগুলো করা হয়েছে দক্ষতা, যোগ্যতা এবং পেশাগত সক্ষমতার ভিত্তিতে। আমাদের লক্ষ্য একটাই—দেশের প্রতিটি ভোটার যেন ভোট দিতে পারেন নিরাপদ পরিবেশে, ভয়মুক্ত মনে এবং সর্বোচ্চ স্বাধীনতায়। নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে আরো কোনো পদক্ষেপ প্রয়োজন-তা কমিশন অবশ্যই গ্রহণ করবে।”

প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, “এই দেশ আমাদের, এই রাষ্ট্র আমাদের, এর ভবিষ্যতও আমাদের হাতেই। এখন আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। আমরা এবারের বিজয় দিবসকে জাতীয় জীবনে নতুনভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে নিতে চাই। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক অনুপ্রেরণা ধারণ করে জনগণের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে যে নবযাত্রা সূচিত হয়েছে, তা এগিয়ে নেওয়াই আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব।”

তিনি বলেন, “শতবর্ষের সংগ্রাম ও বহু কষ্টে অর্জিত স্বাধীনতাকে পূর্ণতা দিতে নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী ও সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলি। ধর্ম–বর্ণ–গোষ্ঠী এবং লিঙ্গ পরিচয় নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাই শান্তি, সমৃদ্ধি ও গণতন্ত্রের পথে। আসুন, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, মানবিকতা ও উন্নয়নের পথে একসঙ্গে এগিয়ে যাই। সবাইকে আবারও মহান বিজয় দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।”

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি নিউজ এবং বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি বেতার ও টেলিভিশনে একযোগে সম্প্রচার করা হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

যারা ভোট বাক্স ডাকাতি করবে তারা মানুষের স্বাধীনতা হরণকারী: প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশিত সময় : ১০:০৮:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি সাধারণ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “সরকার গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

 

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় মহান বিজয় দিবস-২০২৫ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই কথা বলেন।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমরা চাই এই নির্বাচন হোক সত্যিকার অর্থে উৎসবমুখর, অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ এবং সর্বোপরি সুষ্ঠু। নির্বাচনকে ঘিরে নিরাপত্তা, প্রশাসনিক প্রস্তুতি, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং পর্যবেক্ষণের প্রতিটি ধাপকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও পবিত্রতা রক্ষার জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা অপরিসীম। আমি দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের প্রতি উন্মুক্ত আহ্বান জানাচ্ছি—আপনারা একে অপরকে প্রতিযোগী হিসেবে দেখবেন, কখনো শত্রু হিসেবে দেখবেন না। নির্বাচনের মাঠে এমন একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করুন, যাতে দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যারা ভোট বাক্স ডাকাতি করবে তারা দেশের মানুষের স্বাধীনতা হরণকারী। তারা নাগরিকদের দুশমন। তাদের থেকে নাগরিকদের রক্ষা করা আমাদের সবার অবশ্য কর্তব্য। ভোট জনগণের ভবিষ্যৎ রচনার অক্ষর। ভোট বাক্সে ভোট জমা দিতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যৎ আর রচনা করা যাবে না। আপনার ভোট আপনি সযত্নে ভোট বাক্সে দিয়ে আসুন। কেউ বাধা সৃষ্টি করলে তাকে সুশৃংখলভাবে প্রতিহত করুন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিন।”

দেশবাসীকে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “ভোটের ওপর নির্ভর করছে আপনার আমার সবার ভবিষ্যৎ। আপনার আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ। যোগ্য লোককে ভোট দিন। জাতির ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন। মনে রাখবেন, ভোট রক্ষা করা দেশ রক্ষা করার সমান দায়িত্ব। ভোট রক্ষা করুন। দেশকে রক্ষা করুন। ভোট দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার গাড়ির চাকা। এই চাকা কাউকে চুরি করতে দেবেন না।”

 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে প্রশাসনকে আরো কার্যকর, নিরপেক্ষ ও নির্বাচনি পরিবেশের উপযোগী করতে সরকার মাঠ প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনে বেশ কিছু রদবদল করেছে। এই পরিবর্তনগুলো কারো প্রতি অনুরাগ বা বিরাগ প্রসূত নয়। এগুলো করা হয়েছে দক্ষতা, যোগ্যতা এবং পেশাগত সক্ষমতার ভিত্তিতে। আমাদের লক্ষ্য একটাই—দেশের প্রতিটি ভোটার যেন ভোট দিতে পারেন নিরাপদ পরিবেশে, ভয়মুক্ত মনে এবং সর্বোচ্চ স্বাধীনতায়। নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে আরো কোনো পদক্ষেপ প্রয়োজন-তা কমিশন অবশ্যই গ্রহণ করবে।”

প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, “এই দেশ আমাদের, এই রাষ্ট্র আমাদের, এর ভবিষ্যতও আমাদের হাতেই। এখন আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। আমরা এবারের বিজয় দিবসকে জাতীয় জীবনে নতুনভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে নিতে চাই। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক অনুপ্রেরণা ধারণ করে জনগণের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে যে নবযাত্রা সূচিত হয়েছে, তা এগিয়ে নেওয়াই আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব।”

তিনি বলেন, “শতবর্ষের সংগ্রাম ও বহু কষ্টে অর্জিত স্বাধীনতাকে পূর্ণতা দিতে নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী ও সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলি। ধর্ম–বর্ণ–গোষ্ঠী এবং লিঙ্গ পরিচয় নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাই শান্তি, সমৃদ্ধি ও গণতন্ত্রের পথে। আসুন, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, মানবিকতা ও উন্নয়নের পথে একসঙ্গে এগিয়ে যাই। সবাইকে আবারও মহান বিজয় দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।”

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি নিউজ এবং বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি বেতার ও টেলিভিশনে একযোগে সম্প্রচার করা হয়।